Categories
অর্থনীতি

চিনির দাম ও সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বচসা

সরকার চিনির দাম বেঁধে দিলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দাম অর্থাৎ ১০২ টাকা কেজি দরে মিলগেট থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহেও সংকট রয়েছে। যদিও চিনিকলমালিকদের দাবি, চিনির পর্যাপ্ত মজুত আছে। সরবরাহে কোনো সংকট নেই।

রাজধানীর মতিঝিলে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় পাইকারি ব্যবসায়ী ও চিনিকলমালিকদের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। সভার একপর্যায়ে চিনির দাম ও সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একচোট বচসাও হয়েছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত কিংবা দাম হ্রাসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দাম নিয়েও কথা হয়। দাম কমাতে মুরগি ও গরুর মাংস আমদানির পরামর্শও দেন এফবিসিসিআই সভাপতি। সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

সভায় চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, ‘গত ছয় মাস চিনি সরবরাহে ঘাটতি ছিল। এখনো ঘাটতি আছে। বর্তমানে মিলগেট থেকে ১০৬-১০৭ টাকা কেজি দরে চিনি কিনতে হচ্ছে। ক্যাশ মেমোও দেওয়া হচ্ছে না। ছয় মাস ধরে আমরা বলে আসছি, পরিশোধিত চিনি আমদানি করতে হবে। বর্তমান শুল্ককাঠামোতে চিনি আমদানি করে ব্যবসায় টেকা সম্ভব নয়। পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৬২ শতাংশ শুল্ক-কর বসিয়ে রাখা হয়েছে।’

এ সময় সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, পর্যাপ্ত চিনি ও ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। কোনো সংকট হবে না। দামও বাড়বে না। উৎপাদন চালাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি করেন তিনি।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সমিতির মাধ্যমে ১০২ টাকা কেজি দরে চিনি সরবরাহ করা হলে আমরা ১ টাকা কমিশন রেখে খুচরা বাজারে বিক্রি করে দেব। বাজারে কোনো সংকট হবে না। ভোক্তারা সরকারের নির্ধারিত দামে চিনি পাবেন।’

এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন চিনির পাইকারি ব্যবসায়ীদের উদ্দশে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, চিনির পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আপনারা মিডিয়ার সামনে যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তাতে কেউ কেউ নতুন করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। আপনারা উল্টাপাল্টা কথা বলে বাজারে ভুল বার্তা দেবেন না।’ তাৎক্ষণিকভাবে সভাপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন চিনি ব্যবসায়ী সমিতির এক সহসভাপতি। তিনি জানতে চান, কী উল্টাপাল্টা কথা তাঁরা বলছেন। তখন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এই ব্যবসায়ী নেতার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

পরে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, চিনির মতো নিত্যপণ্যের আমদানিতে ৬২ শতাংশ শুল্ক কেন থাকবে। দেশীয় শিল্পকে কেন এতটা সুরক্ষা দিতে হবে। চিনির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো হলে সরবরাহে সংকট থাকত না। ভোক্তারাও স্বস্তিতে থাকতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। যদিও সরকারের নির্ধারিত দাম খোলা চিনি ১০৭ আর প্যাকেটজাত ১১২ টাকা। বাজারে কয়েক মাস ধরেই প্যাকেটজাত চিনির সংকট রয়েছে।

এক মাসে ব্রয়লার মুরগি দাম কেজিতে ১০০ টাকা কীভাবে বাড়ে, সভায় সেই প্রশ্ন করেন মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে পোলট্রিশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তারা যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, তাহলে তাদের সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ, শিল্পের সুরক্ষার আগে ভোক্তাদের স্বার্থ। প্রয়োজনে মাংস আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

এ বিষয়ে পোলট্রিশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাঁদের যদি উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কয়েক মাসের জন্য আমদানি খুলে দিতে অনুরোধ করব।’ গরুর মাংসের দাম নিয়েও কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, দুবাইয়ে গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকা। তারা ব্রাজিলসহ অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। তাদের (দুবাই) নিজের দেশে কোনো গরুর খামার নেই। ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে গরুর মাংসও আমদানি করা যেতে পারে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘শিল্পের উন্নয়নের নামে ভোক্তাদের লুটে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। উৎপাদকদের সুরক্ষা দেওয়ার নামে ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ করে বাধা তৈরি করে বাজারের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে দিচ্ছি আমরা। যখনই কোনো পণ্যে একচেটিয়া হিস্যা কয়েকটি কোম্পানির হাতে চলে যাচ্ছে, তখন তারা বাজার নিয়ে খেলছে।’

By আনোয়ারা আলী