ভারতের শীর্ষ শ্যুটার মানু ভাকের প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এ তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সারা দেশের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। ইতিহাস তৈরি করে, মানু অলিম্পিক থেকে দুটি ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে ফিরেছেন—একটি মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল এবং আরেকটি মিশ্র দল ইভেন্টে। তিনি একক গেমসে একাধিক পদক জেতা প্রথম ভারতীয় অলিম্পিয়ান হিসেবে গৌরব অর্জন করেছেন। এ সাফল্যের পর দেশের জনগণ তাঁকে ভরিয়ে দিয়েছেন ভালোবাসায়, কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে সেই সমর্থকদের একটি অংশই মানুকে ট্রোল করা শুরু করেছে—কারণ তিনি তাঁর অলিম্পিক পদকগুলো নিয়ে যাচ্ছেন সব জায়গায়।
মানু ভাকের যেখানেই যাচ্ছেন, তাঁর সাথে সেই ব্রোঞ্জ পদকগুলো বহন করছেন, যা ট্রোলদের কাছে “শো-অফ” মনে হয়েছে। তবে এই ট্রোলিংয়ের জবাব দিতে দেরি করেননি মানু। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “আমি আমার পদক কেন দেখাব না?”
মানু ভাকেরের প্যারিস অলিম্পিকের সাফল্য
প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এ মানু ভাকেরের এই জোড়া পদক জয় ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসের একটি বড় মাইলফলক। মানু দেশের সবচেয়ে বড় শ্যুটিং তারকা হওয়ার পাশাপাশি, তাঁর কাঁধে চাপ ছিল বিশাল প্রত্যাশার। তাঁর পারফরম্যান্সের ওপর নজর ছিল গোটা দেশের, বিশেষ করে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
অলিম্পিকে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর, মানুর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই সমস্ত অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর অলিম্পিক পদক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন, যা অনেকের চোখে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
ট্রোলদের আক্রমণ ও মানুর প্রতিক্রিয়া
যদিও মানুর এই অর্জন সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে, ইন্টারনেটে কিছু মানুষ তাঁর পদক বহন করা নিয়ে ট্রোলিং শুরু করে। তাঁকে বলা হয় “পদক দেখানোতে ব্যস্ত” এবং “অলিম্পিক শো-অফ”। ট্রোলরা বিভিন্ন মিম, জিফ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। তাদের ভাষায়, মানু নিজের পদকগুলো নিয়ে এমনভাবে প্রকাশ্যে আসেন যেন তা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।
কিন্তু মানু এই ধরনের সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রথমবারের মতো এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। ট্রোলিংয়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার পদক দেখাবো না কেন? এগুলো কেবল আমার নয়, গোটা দেশের গর্ব। আমি ভারতের জন্য খেলি এবং এই পদকগুলো শুধু আমার সাফল্যের নয়, এটি গোটা দেশের জন্য একটি সম্মান।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অনেক কষ্ট, পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই পদকগুলো অর্জিত হয়েছে। সুতরাং, আমি যদি এই গর্বের মুহূর্তগুলো উদযাপন করি, সেটি কি অন্যায়?”
শ্যুটিং জগতের প্রতিক্রিয়া
মানুর এই প্রতিক্রিয়ার পরে শ্যুটিং জগত এবং ক্রীড়া বিশ্লেষকরা তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রাক্তন অলিম্পিয়ান এবং শ্যুটার রাহুল বর্মা বলেন, “মানুর সাফল্য পুরো দেশের গর্ব। তাঁর পদকগুলো দেখানো সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক। প্রতিটি ক্রীড়াবিদ তাঁদের সাফল্য নিয়ে গর্বিত থাকে, এবং মানু কোনও ব্যতিক্রম নয়।”
একইভাবে, ক্রীড়া সাংবাদিক অমিতাভ কুমার বলেন, “ট্রোলদের এই ধরনের আচরণ একেবারেই অনুচিত। একজন ক্রীড়াবিদের জন্য তাঁর পদক জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি। তাঁকে তাঁর পদক দেখানোর অধিকার রয়েছে। যারা মানুকে ট্রোল করছে, তারা আসলে তাঁর সাফল্যের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে।”
এছাড়াও, পড়ুন : অঞ্চলগুলি কীভাবে কমপ্যাক্ট সার্কিট প্রোটেক্টর মার্কেটের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে?
মানুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এইসব ট্রোলিংয়ের পরেও মানু ভাকের তাঁর শ্যুটিং ক্যারিয়ারে আরও উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য আরও আন্তর্জাতিক পদক জয় এবং ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে গৌরবান্বিত করা।
প্যারিস অলিম্পিকের পরবর্তী সময়ে, মানু আবার অনুশীলনে ফিরে গেছেন এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর আগামী লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক, যেখানে তিনি আরও সাফল্যের আশায় মঞ্চে ফিরতে চান।
সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা
ট্রোলিং, সমালোচনা কিংবা বিতর্ক কোনোটাই নতুন নয় ক্রীড়াবিদদের জীবনে। মানু ভাকেরও এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, তবে তিনি সেই সমালোচনাকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর মতো একজন খেলোয়াড়ের জন্য, ট্রোলিং কোনও বাধা হতে পারে না। বরং, তিনি তাঁর অর্জন নিয়ে গর্বিত, এবং তাঁর লক্ষ্য ভারতের জন্য আরও পদক আনা।
অলিম্পিক থেকে ফেরার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং ক্রীড়া সংস্থায় গিয়ে তরুণদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন এবং শ্যুটিংয়ে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছেন। তাঁর মতে, শ্যুটিং শুধু একটি খেলা নয়, এটি দেশের সম্মান, এবং প্রতিটি পদক সেই সম্মানের প্রতীক।
“আমি আমার পদক নিয়ে গর্ব করি, এবং আমি বিশ্বাস করি এই পদকগুলো ভারতের নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে আরও ভালো কিছু করার জন্য,” মানু ভাকের বলেন।
শেষ কথা
মানু ভাকেরের এই মন্তব্য ট্রোলদের মুখ বন্ধ করেছে, এবং ক্রীড়া দুনিয়ায় আবারও তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন। একটি সাফল্য অর্জন করা যতটা কঠিন, সেটিকে রক্ষা করা এবং সেই সম্মানকে ধরে রাখা আরও কঠিন। মানু ভাকেরের এই সাহসী পদক্ষেপ ক্রীড়া দুনিয়ায় একটি নতুন নজির তৈরি করেছে।