বিশ্বনাথন আনন্দ এবং অলিম্পিয়াড স্বপ্ন: ভারতের অনন্য অর্জন
Categories
sports

বিশ্বনাথন আনন্দ এবং অলিম্পিয়াড স্বপ্ন: ভারতের অনন্য অর্জন

প্রাইজ বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতের ওপেন দলের অধিনায়ক ডি গুকেশ এবং তাঁর সহযোদ্ধারা যখন ট্রফি তুলে ধরলেন, তখন তা তুলে দেওয়া হয় সেই ব্যক্তির হাতে, যিনি বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় দাবাকে এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন—পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ।

৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াডের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের জন্য এক অনন্য মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল। বুদাপেস্টে আয়োজিত এই অলিম্পিয়াডে ভারতের পুরুষ ও নারী উভয় দলই স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস রচনা করে।

ভারতের দাবা ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়

দাবা জগতে ভারতের এই জয় শুধু একটি পদক জয় নয়, এটি একটি প্রজন্মের প্রচেষ্টার ফলাফল। বিশ্বনাথন আনন্দ, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে এককভাবে ভারতের দাবা দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই আনন্দের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতি এই সাফল্যের মাধুর্যকে আরও গভীর করেছিল। গুকেশ ও তার দল যখন ওপেন সেকশনের শিরোপা জিতে তা তুলে দেন, তখন আনন্দ সেই ট্রফি তুলে ধরে ভারতীয় দাবার দীর্ঘ দিনের স্বপ্নকে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর এক নজির গড়লেন।

অনুষ্ঠানের পর আনন্দ তার অনুভূতির কথা বলার সময় বলেন, “আমি মনে রাখছি, প্রথমবার আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো শেষ হলো, এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার বাজানো হলো। তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে ভারত দুটি স্বর্ণপদকই জিতেছে, যা আগে কখনও ঘটেনি। এটা ছিল সত্যিই এক বিশেষ অনুভূতি।”

ভারতের দাবার স্বর্ণযুগের সূচনা

ভারতের দাবা দীর্ঘ সময় ধরে শুধুমাত্র বিশ্বনাথন আনন্দের কাঁধে ভর করেই এগিয়ে চলেছিল। কিন্তু এই অলিম্পিয়াডের সাফল্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, এখন ভারতের দাবা নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত ডি গুকেশ, প্রাগনানন্দা এবং কোয়েটিমের মতো তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা ভারতের দাবাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

অলিম্পিয়াডে ভারতীয় পুরুষ এবং মহিলা দল দুটিই একই সঙ্গে স্বর্ণপদক জিতেছে। এর আগে ভারতের কোন দল দাবার অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ জিততে পারেনি।

এছাড়াও, পড়ুন : অগ্রগামী বৃদ্ধি: গ্লোবাল GaN ওয়েফার সাবস্ট্রেট মার্কেট ডাইনামিকস বিশ্লেষণ করা (2024 – 2031)

গুকেশ এবং প্রাগনানন্দার অবদান

ডি গুকেশ, যিনি ভারতের দাবা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন। ১৭ বছর বয়সী এই দাবাড়ু তাঁর মেধা এবং কৌশলের মাধ্যমে প্রতিপক্ষদের একের পর এক পরাজিত করেছেন। একইভাবে প্রাগনানন্দা, যিনি মহিলা দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দৃঢ় মানসিকতা দিয়ে দলের সাফল্যে বিশাল অবদান রেখেছেন।

গুকেশ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভারতীয় দাবার জন্য এটি এক গর্বের মুহূর্ত।”

ভারতীয় দাবায় নতুন প্রজন্মের উত্থান

ভারতের দাবার জন্য এই অর্জন এক নতুন প্রজন্মের উত্থানের চিহ্ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। একসময় যেখানে বিশ্বনাথন আনন্দ ভারতীয় দাবার একমাত্র উজ্জ্বল তারকা ছিলেন, এখন সেখানে একদল প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড় ভারতের পতাকা উঁচু করে চলেছেন। এই অর্জন শুধু তাদের নিজস্ব কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের দাবার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং দায়িত্বশীলতার ফলাফল।

আনন্দের অভিজ্ঞতা এবং নতুন প্রজন্মের প্রভাব

বিশ্বনাথন আনন্দ, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বের শীর্ষ দাবাড়ুদের একজন ছিলেন, এখন তরুণ প্রতিভাদের জন্য একটি আদর্শ। তাঁর উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব ভারতীয় দাবার বিকাশে অনস্বীকার্য। এই অলিম্পিয়াডের জয়ে তিনি শুধু একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, একজন পরামর্শদাতা এবং পরামর্শদাতা হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন।

অনুষ্ঠানে আনন্দ বলেন, “এটি ভারতীয় দাবার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা এখন একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এটি আমাদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা।”

ভারতীয় দাবার এই সাফল্য শুধু খেলার মাঠেই নয়, গোটা জাতির জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

By তাবাস্সুম ফেরদৌস শাওন