সোনা জয়ের গৌরব নিয়ে সদ্য দেশে ফিরেছেন। দাবা অলিম্পিয়াডে ভারতের হয়ে সাফল্য এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বিদিত গুজরাটি। কিন্তু এই সাফল্যের উদযাপন সম্পূর্ণ করার আগেই তিনি নিজেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে নিলেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে এক আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা থেকে সটান নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দাবা অলিম্পিয়াডে বিদিত গুজরাটি ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সোনা জয় করেছেন। এটি ছিল তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম বড় সাফল্য। এই সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে আসে আরও একটি আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা। যেখানে বিদিতের সামনে ছিল টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিরল সুযোগ। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই সুযোগ হাতছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিদিত জানান, এই প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এছাড়াও, পড়ুন : কিভাবে ডিজিটাল থার্মাল শিপিং লেবেল প্রিন্টার বাজার বিকশিত হবে?
বিদিতের এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই দাবা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই তাঁর দেশপ্রেম ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, একজন খেলোয়াড়ের জন্য নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এক বিরল সম্মান। এটি দেশের জন্য গর্বের বিষয় এবং বিদিতের সিদ্ধান্ত যথাযথ বলেই তারা মনে করেন।
অন্যদিকে, দাবা মহলের একাংশ বিদিতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত খেলার মাঠে সাফল্য অর্জন করা এবং নিজেকে সর্বদা শীর্ষস্থানে রাখা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হাতছাড়া করা কোনওভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। বিশেষত, যখন সেই প্রতিযোগিতায় তাঁর সামনে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো বিরল সুযোগ ছিল।
বিদিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে, তা হল ভারতের দাবা সংস্থা (AICF) ও তাঁর ব্যক্তিগত স্পনসরদের ভূমিকা। একজন শীর্ষ খেলোয়াড়কে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করার জন্য কি তাঁরা উৎসাহিত করেছেন? নাকি এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিদিতের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে? দাবা সংস্থা এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
বিদিত গুজরাটির দাবা কেরিয়ার দীর্ঘদিন ধরেই সফল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। দাবা বোর্ডে তাঁর অনন্য প্রতিভা ও কৌশলের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশের অন্যতম সেরা দাবাড়ু হিসেবে তাঁর খ্যাতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে তিনি এতটা গুরুত্ব দেবেন, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি বিদিতের শ্রদ্ধা কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তিনি মোদির নীতির প্রশংসা করেছেন এবং দেশের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছ থেকে সরাসরি সংবর্ধনা পাওয়ার সুযোগ পাওয়া অবশ্যই এক বিরল মুহূর্ত। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলার সুযোগ ছেড়ে দেওয়া তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের জন্য কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিতর্ক চলছে।
এই টুর্নামেন্ট থেকে বিদিতের নাম প্রত্যাহারের ফলে ভারতীয় দল কিছুটা হলেও চাপে পড়তে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি বরাবরই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমন অবস্থায়, বিদিতের পরিবর্তে কে প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিদিতের অনুপস্থিতি দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে কী প্রভাব ফেলবে, সেটিও দেখার বিষয়।
এই ঘটনার পর থেকেই দাবা প্রেমীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে খেলার মাঠে নিজেকে প্রমাণ করা এবং দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। আবার অন্য একটি অংশ বিদিতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত এবং এটি একজন খেলোয়াড়ের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
যদিও বিদিত এখনও পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনও প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি। তবে দাবা মহল ও খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ঘটনার প্রভাব বেশ কিছুদিন ধরে অনুভূত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।