অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)-এর সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়। তিনি জানান, সব রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিএসএফের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “অসম এবং ত্রিপুরা একযোগে কাজ করছে। যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই ধরনের লোকদের সনাক্ত করা শুরু করে, তাহলে এটি একটি সমন্বিত এবং সুশৃঙ্খল প্রচেষ্টা হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু যদি আমরা কাউকে ফেরত পাঠাই এবং তারা পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে পুনরায় প্রবেশ করে, তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে। আমার মতে, অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়কে বিএসএফকে জোরালোভাবে সমর্থন করতে হবে। অন্যথায়, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।”
মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে হিন্দুরা ভারতে আসবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গা মুসলিমরাই আমাদের দেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে যে ধারণা ছিল, তা সঠিক নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রোহিঙ্গা মুসলিমরাই বিভিন্ন রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে, বিশেষ করে যে রাজ্যগুলো বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত ভাগাভাগি করছে।”
তিনি এও বলেন যে, রাজ্যগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয়ের অভাব থাকলে, সীমান্ত সুরক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অসম এবং ত্রিপুরার সাথে সমন্বিত কাজ করার ফলে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যেখানে অনুপ্রবেশকারীরা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর জোর দিয়ে বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গ যদি অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্ত করতে এবং সীমান্তে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়, তাহলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, “আমরা যদি কাউকে ঠেলে দিই, এবং সে আবার পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ফিরে আসে, তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা বৃথা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। তাই রাজ্য সরকারগুলোকে সতর্ক হতে হবে এবং বিএসএফের সাথে শক্ত হাতে কাজ করতে হবে।”
সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা
বিএসএফের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএসএফ ইতিমধ্যেই কঠোর নজরদারি করছে, কিন্তু সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সহায়তা ছাড়া তাদের পক্ষে একা কাজ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিএসএফের কার্যক্রমের সমন্বয় করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অসম ও ত্রিপুরার মধ্যে এই সমন্বয় রয়েছে, এবং আমরা এর ইতিবাচক ফলাফলও পাচ্ছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয় সরকারের সাথে যদি আরও সমন্বিত কাজ করা যায়, তাহলে আমরা আরও ভালো ফলাফল আশা করতে পারি।”
মেঘালয়ের অবস্থান
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা মেঘালয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, “মেঘালয়ও বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত ভাগাভাগি করে, এবং সেখান থেকেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে। তাই মেঘালয় সরকারকেও বিএসএফের সাথে মিলে কাজ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রবেশের পথ বন্ধ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “অনুপ্রবেশ রোধ করতে সব রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শুধু অসম বা ত্রিপুরা একা একা সফল হতে পারবে না, যদি পশ্চিমবঙ্গ বা মেঘালয় তাদের অংশগ্রহণ না করে।”
এছাড়াও, পড়ুন : স্মার্ট সাইনেজ বাজারের আকার 3.50% এর CAGR-এ বাড়ছে, এই প্রতিবেদনটি 2024-2030 এর প্রকার, বিভাজন, বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাস দ্বারা বিশ্লেষণ কভার করে
অসমের উদ্যোগ
অসম সরকারের উদ্যোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা অসমে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছি। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে নজরদারি করা হচ্ছে, যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে। আমরা বিএসএফের সাথে নিয়মিত সমন্বয় করছি এবং সময়ে সময়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও হচ্ছে।”
তিনি জানান, “আমরা ত্রিপুরার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছি, এবং সেই সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রবেশের প্রচেষ্টা রোধ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়ও যদি এই প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়, তাহলে আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।”
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর চ্যালেঞ্জ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়ে হিমন্ত বলেন, “এই অঞ্চলের সীমান্ত খুব সংবেদনশীল এবং এখানে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের প্রবণতা খুব বেশি। এটি শুধুমাত্র সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য কেবল কেন্দ্রের দায়িত্ব নয়, বরং রাজ্য সরকারগুলোকেও সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রত্যেক রাজ্যের উচিত সীমান্ত সুরক্ষায় নজরদারি বাড়ানো এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।”
উপসংহার
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার বক্তব্যে সীমান্ত সুরক্ষায় রাজ্য সরকার ও বিএসএফের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, প্রতিটি রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়কে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রবেশ রোধ করা যায়।”
এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যগুলোর মধ্যে সমন্বিত কাজ এবং বিএসএফের সাথে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।