ভারত যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শুধুমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করতে পারে, মোদি সরকারের কাছে একটি শান্তি পরিকল্পনা রয়েছে।
২৪শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে “ভারত, এশিয়া এবং বিশ্ব” শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময়, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শংকর একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পূর্ব ইউরোপের দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় বসাতে চেষ্টা করছেন।
জয়শংকর ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় শক্তিগুলোকে অবহিত রেখে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভারতের পরিচালিত উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
২৩শে সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী মোদি চার মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ছিল সংঘর্ষ থামানো এবং শান্তি আলোচনা করার বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তাকে অবহিত করা।
ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, নয়াদিল্লি একটি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য হল উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনা।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যক্তিগতভাবে উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তিনি গত বছর সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেই সময় তিনি পুতিনকে বলেছিলেন, “আজকের যুগ যুদ্ধের যুগ নয়।”
এর পরে, মোদি মে মাসে জাপানের হিরোশিমায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
শান্তি পরিকল্পনার বিশদ
যদিও ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত তার শান্তি পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিশদ প্রকাশ করেনি, কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে কিছু মূল বিষয় জানা গেছে:
১. যুদ্ধবিরতি: প্রথম ধাপে, ভারত উভয় পক্ষকে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এটি সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে এবং আরও বেসামরিক হতাহত এড়াতে সাহায্য করবে।
২. কূটনৈতিক আলোচনা: যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরে, ভারত উভয় পক্ষকে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতিতে প্রত্যক্ষ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে।
৩. সীমান্ত নিরাপত্তা: পরিকল্পনাটি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করার প্রস্তাব দিচ্ছে। এটি উভয় দেশের নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
৪. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন: ভারত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। এটি দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
৫. নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা: পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, পড়ুন : ওয়াইপার ব্লেড মার্কেট রিসার্চ রিপোর্ট: 2024 – 2031 এর মধ্যে 6% স্থিতিশীল CAGR সহ বাজারের পূর্বাভাস এবং বৃদ্ধির সম্ভাবনা
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতের শান্তি প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে জোর দিয়েছে যে যেকোনো সমাধান অবশ্যই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সম্মান করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে, তবে জোর দিয়েছে যে রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেন থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
রাশিয়া এখনও পর্যন্ত ভারতের প্রস্তাবের প্রতি কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে মস্কো বারবার বলেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রস্তুত, যদি তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ মেটানো হয়।
ইউক্রেন ভারতের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে জোর দিয়েছে যে যেকোনো সমাধান অবশ্যই তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে। কিয়েভ দাবি করেছে যে তারা তখনই আলোচনায় বসবে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের সমস্ত অঞ্চল থেকে সরে যাবে।
সামনের পথ
ভারতের শান্তি পরিকল্পনা যদিও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে এর সফলতা নিশ্চিত করার জন্য অনেক বাধা রয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েরই দৃঢ় অবস্থান রয়েছে, যা আপোষ করা কঠিন করে তুলেছে। রাশিয়া দাবি করছে যে সে ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল দখল করেছে, যেখানে ইউক্রেন তার সমস্ত আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রভাব, বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্য মূল্যের ওপর, বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং উভয় পক্ষের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে।
আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে, কূটনীতিবিদরা ভারতের প্রস্তাবের প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। যদিও চ্যালেঞ্জ বিশাল, তবু অনেকেই আশা করছেন যে ভারতের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা হয়তো এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে সাহায্য করতে পারে।