উত্তর প্রদেশে আসন্ন উপনির্বাচনগুলোতে মুখোমুখি হতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব। ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উপনির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এবং ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে সরাসরি লড়াই প্রত্যক্ষ করা যাবে।
যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে এনডিএ
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এনডিএ-র প্রচারের দায়িত্বে থাকবেন, যেখানে তাকে নিজের সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং নীতি তুলে ধরে দলের ভোটারদের কাছে টানতে হবে। এই উপনির্বাচনে তার রাজনৈতিক মঞ্চে থাকা মানেই তার নেতৃত্বে এবং তার সরকারের ওপর ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিজেপির হতাশাজনক ফলাফল এই নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে।
বিজেপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংকটও উপনির্বাচনগুলোর গুরুত্বকে আরো বাড়িয়েছে। দলের কিছু প্রবীণ নেতারা সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা দলের ভেতরেই এক প্রকার অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এই নির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজ এবং প্রভাব পুনর্বিবেচনার সুযোগ হবে।
অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের প্রচার
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ইন্ডিয়া জোটের প্রচারের নেতৃত্ব দেবেন। তার দল প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করছে, যেখানে কংগ্রেসও ইন্ডিয়া জোটের অংশ। কংগ্রেস এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকায় লড়াইটি প্রায় সরাসরি বিজেপি এবং এসপির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি তাদের ঐতিহ্যবাহী ভোটব্যাংক এবং সরকারবিরোধী ভোটগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে বিজেপি সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে এবং সরকারবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়ে অখিলেশ প্রচারণা চালাবেন।
কংগ্রেসের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার
উত্তর প্রদেশে নয়টি আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তও এই নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়া জোটের ঐক্য প্রদর্শনের দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের দুর্বল অবস্থানের ইঙ্গিতও হতে পারে, যেখানে কংগ্রেস বড় ধরনের শক্তি হিসেবে এখনও উঠে আসতে পারেনি।
১০টি আসনের লড়াই
এই উপনির্বাচনগুলোতে মূলত ১০টি আসনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে অযোধ্যা জেলার মিলকিপুর আসনের উপনির্বাচন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, কারণ সেই আসনের নির্বাচন সংক্রান্ত একটি পিটিশন বর্তমানে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে।
উপনির্বাচন: বিজেপির কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই
এই উপনির্বাচনগুলোর ফলাফল বিজেপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের ব্যর্থতা এবং অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের কারণে দলের নেতৃত্বের ওপর চাপ বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং দলের মধ্যে বিরোধপূর্ণ মনোভাবকে প্রশমিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে, উপনির্বাচনের ফলাফল দলের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় নির্ধারক হতে পারে।
সমাজবাদী পার্টির জন্য সুযোগ
সমাজবাদী পার্টির জন্য এই উপনির্বাচনগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের একটি বড় সুযোগ। অখিলেশ যাদবের দল যদি এই উপনির্বাচনগুলোতে ভালো ফলাফল করতে পারে, তবে এটি রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হিসেবে এসপিকে আরো প্রমাণ করবে। অখিলেশ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সমাবেশ এবং জনসভা করে প্রচারের শুরু করেছেন এবং তার বক্তব্যে বিজেপি সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করছেন।
প্রচারণার প্রস্তুতি
উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই উভয় দলই ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিজেপি ও এসপির কর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার হয়েছে। উভয় পক্ষই তাদের স্থানীয় নেতাদের মোতায়েন করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় দলগুলো তাদের স্থানীয় ইস্যুগুলোকে প্রধান করে তুলেছে। বিজেপি যেখানে উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়গুলোকে তুলে ধরতে চায়, সেখানে সমাজবাদী পার্টি সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে স্থানীয় সমস্যা এবং সামাজিক সাম্য নিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে।
উত্তর প্রদেশের এই উপনির্বাচনে কার ভাগ্য কতটা উজ্জ্বল হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।