‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ১০ বছর পূর্তি উদযাপন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা: ‘অনেক আইকন…’
Categories
News

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ১০ বছর পূর্তি উদযাপন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা: ‘অনেক আইকন…’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের ১০ বছর পূর্তি উদযাপন করছেন এবং ভারতের উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতি ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি ভারতের উৎপাদন খাতে গতি আনতে এবং আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে চালু করা হয়েছিল।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সূচনা

প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৪ সালে যখন এই উদ্যোগের সূচনা করেন, তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে সরকার ভারতের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচককে বিশ্বের সেরা ৫০ এর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য কাজ করবে। সেই সময়, ভারতে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল এবং সরকারি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিরতা ছিল। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসার পরিবেশকে সহজতর করা, উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা এবং বিদেশী বিনিয়োগকে আকর্ষণ করা।

১০ বছরের অগ্রগতি

১০ বছর পর, এই উদ্যোগকে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘একটি গর্জমান সাফল্য’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “মেক ইন ইন্ডিয়া ভারতকে একটি আমদানি নির্ভর দেশ থেকে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এই সাফল্যের পিছনে ভারতের নাগরিকদের অদম্য পরিশ্রম রয়েছে। তারা আজকের দিনের পথপ্রদর্শক, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং উদ্ভাবক।”

প্রধান অর্জনসমূহ

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পটি ভারতের উৎপাদন খাতকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত এখন বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং এতে নানা খাতে অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, এবং প্রতিরক্ষা খাত উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়েছে। এছাড়াও, প্রযুক্তি খাতেও ভারতের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের পর থেকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ করেছে এবং দেশে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতে বিভিন্ন খাতে নতুন নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ র‍্যাংকিং-এ অগ্রগতি

২০১৪ সালে যখন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সূচনা হয়, তখন ভারতের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ র‍্যাংকিং ছিল ১৪২। আজকের দিনে সেই র‍্যাংকিং অনেকটাই উন্নত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লেখ করেছেন যে এই উদ্যোগের ফলে প্রশাসনিক সংস্কার হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও, পড়ুন : গ্রাউন্ড ফল্ট মনিটরিং রিলে বাজারের আকার – বৃদ্ধির প্রবণতা, পরিসংখ্যান এবং পূর্বাভাস (2024 – 2031)


অগ্রগতির বিভিন্ন খাত

ইলেকট্রনিক্স এবং মোবাইল ফোন উৎপাদন:

ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদন কেন্দ্র। অনেক আন্তর্জাতিক মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানি ভারতে তাদের উৎপাদন স্থাপন করেছে, যা দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে।

অটোমোবাইল শিল্প:

ভারত এখন বৈশ্বিক গাড়ি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। অনেক বহুজাতিক অটোমোবাইল কোম্পানি ভারতে তাদের কারখানা স্থাপন করেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

প্রতিরক্ষা খাত:

প্রতিরক্ষা খাতেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ভারত এখন নিজস্ব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করছে এবং বিভিন্ন দেশকে সরবরাহ করছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে ভারতের অগ্রগতি এখানেই থেমে নেই। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে দেশের উৎপাদন খাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, “আমরা শুধুমাত্র উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি না, বরং আমরা একটি স্বনির্ভর ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।”

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সফল হলেও, এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে, দেশের অবকাঠামোগত সমস্যা, শ্রম খাতের চ্যালেঞ্জ এবং প্রযুক্তির অভাব কিছুটা ব্যাহত করেছে এই প্রকল্পের অগ্রগতি। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লেখ করেছেন যে সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সাহায্যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।

নাগরিকদের প্রতি আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বার্তায় নাগরিকদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র অংশীদার হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “এই প্রকল্পের সাফল্য শুধুমাত্র সরকারের নয়, এটি প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প আমাদের স্বপ্নের ভারত গড়তে সাহায্য করবে।”

উপসংহার

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ১০ বছর পূর্তির এই মুহূর্তে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের উৎপাদন খাতের সাফল্যের প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি, উৎপাদন এবং বৈশ্বিক ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আজকের দিনে শুধুমাত্র একটি প্রকল্প নয়, এটি ভারতের অগ্রগতির প্রতীক।

By নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু