মধ্যপ্রদেশের মৈহার জেলায় জাতীয় সড়ক ৩০-এ শনিবার রাতে একটি বাস ও একটি হাইভা ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ৯ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি স্থানীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ ঘটে।
সাতনা জেলার পুলিশ সুপার সুধীর আগরওয়াল জানিয়েছেন, “ভয়াবহ সংঘর্ষের ফলে বাসটি ট্রাকের সাথে আটকে গিয়েছিল। বাসের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করতে জেসিবি এবং কাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর ২৮ জনকে সাতনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজন মারা যান। দুজন যাত্রীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক বলে জানা গেছে।”
দুর্ঘটনার বিবরণ
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের একটি বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সির স্লিপার কোচ বাসটি শনিবার রাতে প্রয়াগরাজ থেকে নাগপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, হাইভা ট্রাকের চালক হঠাৎ করে ট্রাকের গতি কমিয়ে রাস্তার উপরেই থামিয়ে দেন। কিন্তু পিছন থেকে আসা বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং পাথর বোঝাই ট্রাকের সাথে বাসটি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
মৃতদের পরিচয়
নিহত ৯ জনের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বাকি ৪ জনের পরিচয় নির্ধারণের জন্য তাঁদের পরিহিত পোশাকের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে যাঁদের পরিচয় নির্ধারণ করা গেছে, তাঁরা হলেন:
১. রাম প্রসাদ যাদব (৪৫), উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলার বাসিন্দা ২. সুনীল কুমার (৩৮), উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা ৩. অনিল পাটিল (৪২), মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা ৪. বিজয় শর্মা (৩৫), উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা ৫. রাকেশ গুপ্তা (৪০), মহারাষ্ট্রের পুণের বাসিন্দা
বাকি চারজনের পরিচয় নির্ধারণের কাজ চলছে।
উদ্ধার কার্যক্রম
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। সাতনা জেলা হাসপাতালে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে আহতদের চিকিৎসার জন্য।
মৈহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনিল কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, “আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করি। বাসের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীদের বের করতে জেসিবি ও কাটার ব্যবহার করতে হয়েছে। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
এছাড়াও, পড়ুন : অটোমোটিভ টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম মার্কেট রিসার্চ রিপোর্টে বাজারের আকার, শেয়ার এবং বৃদ্ধির হার 14.7% CAGR পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে
সরকারি প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “মৈহারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার খবরে আমি অত্যন্ত ব্যথিত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”
মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ৫০,০০০ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশের নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটি
মধ্যপ্রদেশের পরিবহন মন্ত্রী গোবিন্দ সিং রাজপুত জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা এই দুর্ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করব। যদি কোনও গাফিলতি পাওয়া যায়, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সড়ক নিরাপত্তা উদ্বেগ
এই দুর্ঘটনা আবারও ভারতের সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৪,৬১,৩৭৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে ১,৬৮,৪৯১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডঃ অনিল কুমার শর্মা বলেন, “এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সড়ক অবকাঠামো উন্নত করতে হবে, চালকদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
মধ্যপ্রদেশ সরকার সম্প্রতি রাজ্যের প্রধান সড়কগুলোতে গতি সীমা নিয়ন্ত্রণ ও ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।