চার মাস ধরে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে বেলফাস্টের বৃষ্টিভেজা বন্দরে আটকে থাকা বিলাসবহুল বিশ্বভ্রমণ ক্রুজ অবশেষে সোমবার রাতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে ক্রুজের যাত্রীদের মধ্যে।
প্রথম সমস্যা ও দেরির শুরু: বিশ্বের অন্যতম বড় ও বিলাসবহুল ক্রুজ হিসেবে পরিচিত এই জাহাজটি মে মাসে বেলফাস্টে এসে পৌঁছায়। জাহাজটি মূলত বেলফাস্ট থেকে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু পৌঁছানোর পরপরই জাহাজের ইঞ্জিনের একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ে, যা নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কয়েকবার ক্রুজটির যাত্রা বিলম্বিত করে।
প্রথম সমস্যা ধরা পড়ার পরপরই ক্রুজের ইঞ্জিন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হয় এবং তা মেরামতের জন্য নাবিক ও প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেন। তবে, এই সমস্যাটি নিরসন করতে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় এবং ক্রুজের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
এদিকে ক্রুজের যাত্রার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর যাত্রীরা হতাশা এবং বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকেন। অনেকেই ক্রুজের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষের কথা জানান। বিশেষ করে, ক্রুজের বিলাসী যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, “আমরা একটি বিলাসবহুল অভিজ্ঞতার জন্য অর্থ প্রদান করেছি, কিন্তু আমরা শুধুই বন্দরে আটকে আছি।”
বিলম্বের কারণ: বেলফাস্টের বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ক্রুজটি মূলত প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, যা পরে আরও বড় রূপ নেয়। জাহাজের ইঞ্জিনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়, যার ফলে ক্রুজটি মেরামত এবং আপগ্রেড করার জন্য নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।
এরপরে, জাহাজটির বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা এবং পুনঃস্থাপনের জন্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মেরামত দল বেলফাস্টে পাঠানো হয়। তারা জাহাজটির ইঞ্জিনের প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে, এবং নতুন যন্ত্রাংশ বসানো হয়। এরপর আরও বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর অবশেষে ক্রুজটি যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়। তবে, প্রতিটি ধাপে ধাপে নতুন সমস্যা দেখা দেয়, যা বিলম্বকে বাড়িয়ে তোলে।
যাত্রীদের অবস্থা: এই বিলম্বের সময় ক্রুজের যাত্রীরা মূলত বন্দরের আশপাশের হোটেলে অবস্থান করেন। অনেক যাত্রী শুরুতে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলেও পরে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন। যাত্রীদের মধ্যে অনেকে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক যাত্রী লেখেন, “আমরা আমাদের স্বপ্নের ভ্রমণের জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু আমরা বন্দরে আটকে আছি চার মাস ধরে।”
একই সঙ্গে কিছু যাত্রী ক্রুজ কর্তৃপক্ষের সেবা নিয়েও সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ক্রুজ কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করেনি এবং যাত্রার বিলম্ব সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য প্রদান করেনি। তবে, পরে ক্রুজ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের দুর্দশা লাঘবের জন্য অতিরিক্ত সেবা প্রদান করেছে এবং তাদের হতাশা কমানোর চেষ্টা করেছে।
এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল পলিভিনাইল ক্লোরাইড ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেপ মার্কেট ল্যান্ডস্কেপ
কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: ক্রুজ কর্তৃপক্ষ এই বিলম্বের জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বলে জানায়। ক্রুজ পরিচালনা কমিটির একজন মুখপাত্র বলেন, “আমাদের জন্য যাত্রীদের সুরক্ষা এবং সুবিধা সবার আগে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতেই নিশ্চিত করতে চাই যে, যাত্রার সময় যাত্রীদের কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। এজন্য মেরামত এবং আপগ্রেড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের যাত্রীরা এই দেরি সত্ত্বেও একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা পাবেন এবং এই বিলম্বের পরে আমরা তাদের একটি আরও সুন্দর এবং নিরাপদ যাত্রা উপহার দিতে সক্ষম হব।”
সোমবারের যাত্রার প্রস্তুতি: অবশেষে চার মাসের দীর্ঘ অপেক্ষার পর সোমবার রাতে বিলাসবহুল এই ক্রুজটি বেলফাস্ট বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত। শেষবারের মতো যান্ত্রিক পরীক্ষাগুলি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে ক্রুজটি আবারও বিশ্বভ্রমণে যাত্রা করবে।
এই দীর্ঘ দেরির পর যাত্রীরা যে আনন্দিত তা স্পষ্ট। তাদের মধ্যে অনেকে বলেছেন যে, তারা ভ্রমণ করতে মুখিয়ে আছেন এবং নতুন অভিজ্ঞতার অপেক্ষায় রয়েছেন।