দিল্লি: দিল্লি পুলিশের দ্বারা সিংঘু সীমান্তে জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক এবং তার সমর্থকদের আটক করা নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমালোচনা করে বলেন, “এটি সরকার পরিচালনার কোনো সঠিক পদ্ধতি নয়।”
সোনম ওয়াংচুক এবং তার সমর্থকরা লাদাখ থেকে দিল্লি পর্যন্ত একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল লাদাখের জন্য ষষ্ঠ তফসিলের দাবিকে তুলে ধরা। ষষ্ঠ তফসিলের মাধ্যমে লাদাখকে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হবে, যা স্থানীয় জনগণের জমি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিকে রক্ষা করবে।
সোনম ওয়াংচুক এবং সমর্থকদের আটক
রবিবার সকালে, দিল্লি পুলিশের একটি টিম সোনম ওয়াংচুক ও তার প্রায় ১২০ জন সমর্থককে আটক করে। তারা লাদাখ থেকে রাজধানীতে পৌঁছে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল, যেখানে তাদের প্রধান দাবি ছিল লাদাখের জন্য ষষ্ঠ তফসিল প্রয়োগ করা।
সিংঘু সীমান্তে পুলিশের আটকানোর ফলে, লাদাখ থেকে আসা এই দলটি তাদের প্রতিবাদ স্থগিত করতে বাধ্য হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, “আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায়” এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, সমর্থকরা বলছেন, তারা কোনো অসংগতি সৃষ্টি করেনি এবং তাদের আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
রাহুল গান্ধীর প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “যারা তাদের অধিকার দাবি করছে, তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “এভাবে দেশের নাগরিকদের সাথে আচরণ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার।”
গান্ধী আরও বলেন, “সরকারের উচিত ছিল এই নাগরিকদের কথা শোনা, তাদের সমস্যাগুলি বুঝে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা। কিন্তু তাদের আটক করে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।”
ষষ্ঠ তফসিলের দাবি
লাদাখের জন্য ষষ্ঠ তফসিলের দাবি বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই লাদাখের জনসাধারণের মধ্যে এই দাবি শক্তিশালী হয়েছে। ষষ্ঠ তফসিলের মাধ্যমে লাদাখকে একটি বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হবে, যা অঞ্চলটির সংস্কৃতি, সম্পত্তি ও ভাষার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
এই প্রসঙ্গে, সোনম ওয়াংচুক বলেছেন, “লাদাখের জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের জমি, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। ষষ্ঠ তফসিলের মাধ্যমে আমরা এই সুরক্ষা পেতে পারি।”
প্রতিরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ মিছিল
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এই আটক অভিযানটি ছিল “প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ”। এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে খবর ছিল যে, এই প্রতিবাদ মিছিলে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে, তাই আমরা তাদের আটক করেছি। এটি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জরুরি ছিল।”
তবে, আটক হওয়া সমর্থকরা দাবি করছেন যে, তারা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করছিলেন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে এই ধরণের আচরণ একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
এক আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা কোনো হিংসার পথ অনুসরণ করিনি। আমাদের কেবল লাদাখের অধিকার রক্ষার দাবি ছিল। পুলিশ আমাদের আটক করে অন্যায় করেছে।”
এছাড়াও, পড়ুন : গ্লোবাল কার্টেসিয়ান ওয়্যারহাউস রোবোটিক মার্কেটকে কী চালনা করছে?
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলও প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কংগ্রেসের পাশাপাশি, আম আদমি পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেসও এই ঘটনাকে নিন্দা করেছে।
আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া বলেছেন, “সরকারের উচিত ছিল এই আন্দোলনকারীদের সাথে সংলাপ করা, তাদের দাবি শোনা। তাদের আটক করা কোনো সমাধান নয়।”
তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র বলেছেন, “এই সরকার কণ্ঠরোধের পথ বেছে নিয়েছে। এটি একটি অগণতান্ত্রিক আচরণ।”
সামাজিক মাধ্যম প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে #StandWithSonamWangchuk ট্রেন্ড করছে। বহু নাগরিক এবং বিভিন্ন সংগঠন এই আটক প্রক্রিয়ার নিন্দা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন।
কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বলছেন, “সরকার মানুষের কথা শুনতে আগ্রহী নয়। যারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে চায়, তাদেরই কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।”
লাদাখের ভবিষ্যৎ আন্দোলন
এই ঘটনার পর লাদাখের নেতারা এবং জনগণ তাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হচ্ছেন। ওয়াংচুকের সমর্থকরা জানিয়েছেন যে, তারা আটকের পরেও তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এক সমর্থক বলেন, “আমরা নির্ভীক, আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবো। লাদাখের সংস্কৃতি ও অধিকার রক্ষার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবো।”
তবে, এই আন্দোলনকে ঘিরে ভবিষ্যতে কি ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আসবে, তা সময়ই বলে দেবে।