কিংবদন্তি অভিনেত্রী ম্যাগি স্মিথ শুক্রবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৯। “ডাউনটন অ্যাবি” তে ডাউয়াগার কাউন্টেস অফ গ্রান্থাম এবং “হ্যারি পটার” সিরিজে অধ্যাপক মিনার্ভা ম্যাকগনাগল চরিত্রে অভিনয় করে স্মিথ বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
ম্যাগি স্মিথের দুই পুত্র ক্রিস লারকিন এবং টোবি স্টিফেনস এক বিবৃতিতে জানান, “আজ সকালে আমাদের প্রিয় মা এবং দাদিমা প্রয়াত হয়েছেন। তিনি আমাদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি রেখে গেলেন। আমরা সকলে তাঁর অসামান্য মেধা এবং ভালোবাসাকে গভীরভাবে স্মরণ করছি।”
দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার
১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের এসেক্সে জন্মগ্রহণ করা ম্যাগি স্মিথ প্রায় সাত দশক ধরে মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে একের পর এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর অভিনয়জীবনের সূচনা হয়েছিল মঞ্চে, ১৯৫০-এর দশকে। লন্ডনের ওল্ড ভিক থিয়েটারে তাঁর প্রথম কাজ ছিল। এরপর তিনি ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় নাট্যকারদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো অস্কারের জন্য মনোনীত হন স্মিথ, শেক্সপিয়ারের “ওথেলো” ছবিতে দেশদেমোনার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। তবে তিনি তাঁর প্রথম অস্কার পান ১৯৬৯ সালে, “দ্য প্রাইম অফ মিস জিন ব্রডি” ছবিতে একজন এডিনবার্গের স্কুল শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করে। এরপর তিনি ১৯৭৮ সালে “ক্যালিফোর্নিয়া সুইট” ছবিতে দ্বিতীয়বারের মতো অস্কার লাভ করেন।
ডাউনটন অ্যাবি এবং হ্যারি পটার: নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়
যদিও ম্যাগি স্মিথ তার অভিনয় দক্ষতার জন্য অনেক আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে আরো জনপ্রিয় হন “ডাউনটন অ্যাবি” সিরিজে ডাউয়াগার কাউন্টেস অফ গ্রান্থামের চরিত্রে অভিনয় করে। এই চরিত্রে তাঁর ঠাণ্ডা হাস্যরস, তীক্ষ্ণ সংলাপ এবং অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স তাঁকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করে তোলে।
এর পাশাপাশি “হ্যারি পটার” সিরিজে অধ্যাপক মিনার্ভা ম্যাকগনাগলের চরিত্রেও তাঁর অসামান্য অভিনয় তাঁকে আরও একটি নতুন প্রজন্মের দর্শকদের প্রিয় করে তোলে। কট্টর কিন্তু হৃদয়বান এই অধ্যাপিকা চরিত্রটি হ্যারি পটার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এছাড়াও, পড়ুন : HAN অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট – গ্লোবাল মার্কেট শেয়ার এবং র্যাঙ্কিং, সামগ্রিক বিক্রয় এবং চাহিদা পূর্বাভাস 2024 – 2031
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
ম্যাগি স্মিথের অভিনয়জীবনের বিস্তার এবং সফলতা তাঁকে শুধু একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের দুইবার বিজয়ী করে তোলেনি, বরং তাঁকে ব্রিটেনের এক বিশিষ্ট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে চারটি এমি অ্যাওয়ার্ড, একটি টনি অ্যাওয়ার্ড, এবং অসংখ্য বাফটা অ্যাওয়ার্ড। তিনি মঞ্চ থেকে শুরু করে টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে সমানভাবে প্রশংসা অর্জন করেছেন।
১৯৯০ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবার তাঁকে “ডেম কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার” (DBE) উপাধি প্রদান করে, যা ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি ছিল। এছাড়া ২০১৪ সালে তিনি ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার, বাফটা ফেলোশিপ, লাভ করেন।
পারিবারিক জীবন
ম্যাগি স্মিথের ব্যক্তিগত জীবনও সমানভাবে আলোচিত ছিল। তিনি দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম স্বামী ছিলেন অভিনেতা রবার্ট স্টিফেনস, এবং তাঁদের সংসারে দুই সন্তান—ক্রিস লারকিন এবং টোবি স্টিফেনস। দ্বিতীয়বার তিনি নাট্যকার বেভারলি ক্রসকে বিয়ে করেছিলেন, এবং ক্রসের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁরা একসাথে ছিলেন। তাঁর দুই ছেলে এবং পাঁচ নাতি-নাতনি এখন তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ।
এক অমলিন অভিনয় প্রতিভার শেষ
ম্যাগি স্মিথের প্রয়াণের সাথে সাথে বিশ্ব সিনেমা এবং থিয়েটারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল। তাঁর অসামান্য প্রতিভা, সুদীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ কর্মজীবন, এবং বিভিন্ন ধারার চরিত্রে তাঁর অদ্বিতীয় পারদর্শিতা তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেত্রীদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ম্যাগি স্মিথের স্মরণে তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীরা গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার সম্প্রদায়ও তাঁর এই প্রয়াণে গভীর শোকাবহ। তাঁর অবদানের কথা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তিনি এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।